পোস্টগুলি

ডায়েরীর পাতা থেকে -১

এখন আকাশের দিকে তাকাতে ভাল লাগেনা। আকাশের আর সেই বাধাহীন সচ্ছতা নেই, আছে ইলেক্ট্রিক তার আর বেতার তরঙ্গের ছড়াছড়ি। ছোটবেলার আকাশের সেই শুভ্রতা কোথায় জানি হারিয়ে গেছে। শুধু রাতের আকাশের সৌন্দর্যে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। কারন প্রকৃতি কালোকে সব শোষন করার ক্ষমতা দিয়েছে, যে ক্ষমতা সাদার নেই। কালো-সাদার এই বিপরীতমুখীতা চলবে অনন্তকাল ধরে। পৃথিবী বদলাবে, বদলাবে তার মানুষেরা কিন্তু কালো-সাদার এই খেলা চলতে থাকবে তাদের মাথার উপর। জন্ম থেকে এই পর্যন্ত পৃথিবীর অনেক পরিবর্তন দেখেছি। আমাদের জেনারেশনই মনে হয় শেষ জেনারেশন যারা তথ্য-প্রযুক্তির বিস্ফোরণ যেমন দেখতেছি তার পাশাপাশি এনালগ (চিঠি, রেডিও, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ) ইত্যাদির স্বাদ অল্প হলেও পেয়েছি। এইতো সেদিনের কথা আব্বু তখন চাকরির সুবাদে কখনো ঢাকা, কখনো রংপুর, ময়মনসিংহ, লালমনিরহাট ক্যান্টনমেন্ট ঘুরে বেড়ান। মোবাইল তখনো গ্রামে সেভাবে আসেনি। প্রতিমাসের নির্দিষ্ট কিছু তারিখের মধ্যে আব্বুর চিঠি আসতো। আম্মুও তার উত্তর দিতেন এবং আমার আর আমার ছোটবোনকে সপ্তাহভর সময় দিতেন নিজেদের চিঠি লেখার। আমাদের চিঠি গুলো ছোট্ট হলেও অনেক যত্ন আর আবেগের ফসল ছিল সেগুলো। এখন ...

নিজের পৃথিবীর ব্যাসার্ধ কমানঃ

প্রস্তাবনাঃ সময় ভাল যাচ্ছে না । আকাশে গুমোট মেঘের মত মনের ভিতর হতাশার মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে। দিন দিন নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছি। নিজের পৃথিবী যত ছোট করা যায় ততই উত্তম। বৃহৎ পৃথিবী তার মানুষদের থেকে বৃহৎ কিছু আশা করে। ক্ষুদ্রের চাওয়া-পাওয়া ক্ষুদ্র। জানি, মানুষ বড় হতে চাই। কিন্তু একবার কেউ যদি ক্ষুদ্র পৃথিবীর মজা পেয়ে যাই , আমার ধারনা সে আর বৃহৎ মুখো হবে না। নিজের পৃথিবী ছোট করার কিছু উপায়ঃ ১। ঘুমঃ নিজের গণ্ডি বা পৃথিবী ছোট করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি এটি। ঘুম আপনার গণ্ডিকে চার দেয়ালের মধ্যে একটি বিছানায় সীমাবদ্ধ রাখে। ফলে পার্থিব অপার্থিব সকল পাপ কাজ ভাল কাজ থেকে আপনি বিরত থাকবেন। আপনার ঘুমের সময় পৃথিবীতে অনেক কিছুই ঘটে যাবে যার মধ্যে আপনি থাকবেন না। তার মানে আপনার পৃথিবী ছোট হতে শুরু করেছে। ২। বন্ধু সংখ্যা কমানঃ        পুরাতন কিছু বন্ধুত্ব স্থির রেখে নতুন বন্ধুত্ব স্থাপন থেকে বিরত থাকুন। অধিক বন্ধু আপনার পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বাড়াবে কিন্তু বন্ধুত্বের আকর্ষণ বাড়াবে না। এটা অনেকটা পরমাণুতে ইলেকট্রন বিন্যাসের মত। পৃথিবীর পরিধি বাড়ার হার বন্ধু সংখ্যা বাড়ার সমানুপাতিক...

দুটি ত্রিভুজ ও একটি সাধারণ বাহু

দুটি ত্রিভুজ ও একটি সাধারণ বাহু (জাকারিয়া আহমেদ) ল্যাম্পপোস্টের আলোতে আজ নিজেকে অনেক হাল্কা লাগছে। অন্যদিনের মত বাড়ি ফেরার তাড়া নেই, নেই মোবাইল কলের ঝামেলা।ছিনতাইকারীকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছা করছে তাকে ছাড়া এমন একটি দিন কোনভাবেই সম্ভব ছিল না।তবে নিজেকে হাল্কা লাগার পিছনে ল্যাম্পপোস্টের কোন হাত নেই। মূলত অনেক দিনের পথের কাঁটা সংসার সমুদ্র থেকে রকিব আজ মুক্ত। তার আজ মুক্তি দিবস। রাজনৈতিক নেতারা যেমন সব লজ্জা বিসর্জন দিয়ে প্রতি বছর জেল মুক্তি দিবস পালন করে,রকিবের ইচ্ছা করছে আগামী বছরগুলোতে সে এই দিনটাকে সংসার মুক্তি দিবস হিসেবে পালন করবে। একটি স্বাক্ষরে যার শুরু ঠিক তেমন একটিতে তার শেষ।জ্যামিতির ভাষায়,দুটি ত্রিভুজের মধ্যে একটি সাধারণ বাহু,কিন্তু সমবাহু হতে হলে এখনো দুইটা বাহু সমান হতে হয়।কিন্তু রকিব-রকেয়ার নামের আদ্যক্ষর ছাড়া আর কোথাও সেটা ঘটেনি।সে যেটা পছন্দ করে রকেয়ার পছন্দ ঠিক তার বিপরীতটা।ডিভোর্স ছাড়া এমন কোন বিষয় পাওয়া যাবে না যেটাতে তারা একমত হতে হয়েছে।সমাজের মানুষ ডিভোর্সকে স্বাভাবিকভাবে না নিলেও,পকেটের ডিভোর্স লেটারকে তার ছাড়পত্র মনে হচ্ছে। বিয়ের রাতে বাব-মার সা...

কেবিন নং ৩৩ ও একটি ল্যাপটপ

ছবি
কেবিন নং ৩৩ ও একটি ল্যাপটপ              (জাকারিয়া আহমেদ) বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে।দীর্ঘদিনের তাপদাহ শেষে স্বস্তির বৃষ্টি। কিন্তু মাসুদ করিমের মনে স্বস্তি নেই।ভীষণ চিন্তার মধ্যে আছেন। মাঝে মাঝে ভাবছেন তিনি পাগল হয়ে যাচ্ছেন । আবার ভাবছেন না পাগল হতে হলে চিন্তাশক্তি আর স্মৃতিশক্তি দুটোই হারাতে হয় কিন্তু তার এখনও দুটোই আছে।একদিন ভাবলেন তার সাইক্রেটিস্ট বন্ধুকে বলবেন । কিন্তু সাহস পেলেন না যদি সে সত্য ি তাকে পাগল ভাবে তাহলে আম-ছালা দুটোই যাবে। আসলে কি তাকে পাগল বলার মত কিছু ঘটেছে? যেটা তিনি শুনছে সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে তাকে কেন পাগল বলা হবে? অপার্থিব কিছুই বিশ্বাস করার পাত্র তিনি নন । আর তার কানে বা চোখে এমন কোন সমস্যা নেই যে সে ভুল শুনবে,ভুল দেখবে।তাছাড়া তিনি একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার যদিও নামের আগে ইঞ্জিঃ শব্দটা বসান না। তার ধারনা ওটা বসালে নিজেকে কেমন যেন ইঞ্জিন-ইঞ্জিন মনে হয়। আসল ঘটনার সূত্রপাত সেদিন যেদিন তিনি নতুন ল্যাপটপটি বাড়িতে আনলেন । প্রথম ২দিন কম্পিউটার কোন এলারট ম্যাসেজ না দিয়ে কেমন জানি রবোটিক আওয়াজ করতো । তিনি বিষয়টাকে তে...

রুপার কাছে খোলা চিঠি

রুপার কাছে খোলা চিঠি জাকারিয়া আহমেদ ১। রুপা , মনে পড়ে, সেই প্রথম দেখার কথা? সারাদিন টুপ - টুপ টিপ - টিপ বৃষ্টি। ফার্মগেটের কৃষ্ণচূড়া তলে দাড়িয়ে বাসের অপেক্ষা। হঠাৎ তুমি এলে, সাদা রঙের লালপেড়ে শাড়ি, কপালে হলুদ টিপ, হাতে লাল-সবুজ চুড়ি। সেদিন ছাতা আনতে ভুলে গেছিলে। তোমার সাদা শাড়ির উপর পানির দাগগুলো বেশ স্পষ্টই দেখাচ্ছিল। আজও ভাবতে অবাক লাগে কি বোকামি ভরা চোখে সেদিন তোমার বৃষ্টি ভেজা শরীরের দিকে অপলক তাকিয়ে ছিলাম।আমার উচিৎ ছিল তোমাকে ছাতার নিচে আশ্রয় দেয়া কিন্তু বোকামির কারণে সেদিন তা হয়ে উঠেনি। সেই বোকামি ভরা চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ৫ মিনিট কাটিয়ে দিলাম। হয়তো আরও কিছুক্ষণ এই বোকামি চলতে পারতো। কিন্তু আমাদের সামনে শাহবাগের বাস। ২। রাস্তায় জমে থাকা কাদা-পানি ছিটকে এসে আমাদের পায়ে লাগলো। ঠিক তখনই আমি বাস্তবে ফিরলাম। হুড়মুড় করে অন্য সবার মত আমরাও বাসে উঠলাম। বৃষ্টির দিন হওয়াই সিটের অভাব ছিল না। আমাকে অবাক করে দিয়ে তুমি বসলে ঠিক আমার সামনের সিটে। তোমার চুলের মিষ্টি ঘ্রাণ বারবার আমার সপ্ন আর বাস্তবতার মধ্যে ফারাক করছিলো। তোমার সাথে দেখা হবার পর ভুলেই বসেছিলাম যে, সেদিন আমার বিশ্ববি...
কলাবাগানের কাছে বিমান বিধ্বস্ত !   জাকারিয়া আহমেদ ১. জামাল সাহেব । মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানির এম ডি । খুবই চালাক এবং বুদ্ধিমান । চোখ জোড়া বড়বড় চেহারাটা গম্ভীর । এমন একটা ভুল তিনি করতে পারেন তা তিনি কল্পনাতেও ভাবেন নি । জামাল সাহেবের অনেকগুলো বাজে অভ্যাস আছে । প্রতিদিন সকালে নতুন করকরে গরম পত্রিকা তার চাই । কেউ ভুলবশত পত্রিকার ভাজ খুললে তিনি ঐ পত্রিকা আর পড়েন না । তখন অগত্যা তার জন্য নতুন আরও একটি পত্রিকা আনতে হয় । ২. এই নিয়ে তার মেয়ে ঐশীর সাথে প্রায়ই ঝগড়া হয় । বাবা-মেয়ের ঝগড়া তাই তেমন জোরালো হয় না । তাদের ঝগড়ার নমুনাটা এরকম- -বাবা , তোমার এই বাজে অভ্যাসটা কবে যাবে ? - কেন কি করেছি আমি ? - প্রতিদিন এই যে পত্রিকার ভাজ তোমার হাত দিয়ে খুলাতে হবে । তার আগে কেউ পত্রিকাই হাত দিতে পারবেনা । - এটা বাজে হতে যাবে কেন ? - আচ্ছা তাহলে তুমি পত্রিকা প্রেসে চাকরি নাও , প্রতিদিনের প্রথম পত্রিকা পড়তে পারবে । - তুই কি আমার সাথে ইয়ার্কি করছিস ? - না , ইয়ার্কি করতে যাব কেন , আর তুমি কি ইয়ার্কি করার পাত্র । - তাহলে । - বাবা , তোমাকে একটা কথা বলি , তুমি তোমার la...