কলাবাগানের কাছে বিমান বিধ্বস্ত!
জাকারিয়া
আহমেদ
১.
জামাল সাহেব । মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানির এম ডি । খুবই চালাক এবং বুদ্ধিমান । চোখ জোড়া বড়বড় চেহারাটা গম্ভীর । এমন একটা ভুল তিনি করতে পারেন তা তিনি
কল্পনাতেও ভাবেন নি।
জামাল সাহেবের
অনেকগুলো বাজে অভ্যাস আছে । প্রতিদিন
সকালে নতুন করকরে গরম পত্রিকা তার চাই।কেউ ভুলবশত পত্রিকার ভাজ খুললে তিনি ঐ পত্রিকা আর পড়েন না।তখন অগত্যা তার জন্য নতুন আরও একটি
পত্রিকা আনতে হয়।
২.
এই নিয়ে তার
মেয়ে ঐশীর সাথে প্রায়ই ঝগড়া হয়। বাবা-মেয়ের
ঝগড়া তাই তেমন জোরালো হয় না।তাদের
ঝগড়ার নমুনাটা এরকম-
-বাবা, তোমার এই বাজে অভ্যাসটা কবে
যাবে?
- কেন কি
করেছি আমি?
- প্রতিদিন এই
যে পত্রিকার ভাজ তোমার হাত দিয়ে খুলাতে হবে।তার আগে কেউ পত্রিকাই হাত দিতে পারবেনা ।
- এটা বাজে
হতে যাবে কেন?
- আচ্ছা তাহলে
তুমি পত্রিকা প্রেসে চাকরি নাও,প্রতিদিনের প্রথম পত্রিকা পড়তে পারবে ।
- তুই কি আমার
সাথে ইয়ার্কি করছিস?
- না, ইয়ার্কি করতে যাব কেন, আর তুমি কি ইয়ার্কি করার পাত্র।
- তাহলে।
- বাবা ,তোমাকে একটা কথা বলি, তুমি তোমার laptop-এই তো পত্রিকা পড়তে পার।
- না, আমি কাগজের পত্রিকাই পড়বো এবং
কেউ যদি ভাজ খোলে তাকে চাটি লাগাবো।
- ok,মাফ চাই ,তুমি তোমার পত্রিকা নিয়েই থাকো।
এমন অনেক
ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে বাবা-মেয়ের ঝগড়া চলে প্রায়শই।
৩.
আজ হকার
পত্রিকা দিয়ে গেছে একটু ভোরে। জামাল
সাহেব ঘুম থেকে উঠে পত্রিকা দেখে লোভ সামলাতে পারলেন না। অথচ তার এখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবার কথা। পত্রিকা পেয়ে তিনি তা বেমালুম ভুলে
বসেছেন।
পত্রিকাটা
তুলে নিয়ে সোফায় বসে শিরোনাম দেখতে লাগলেন –
আজকের প্রধান
শিরোনাম-“ হাসিনা-খালেদা
একই পথের পথিক “ জামাল সাহেবের রাজনীতির প্রতি অনেক টান
তবে পত্রিকা নিয়ে সোফায় বসার পর তিনি প্রকৃতির টানটাই বেশি অনুভব করছেন।তাই ইচ্ছা থাকা সত্যেও বিস্তারিত না পড়ে
শিরোনাম দেখতে লাগলেন। কিন্তু
এটিও বেশিক্ষণ করতে পারলেন না। তাই
পত্রিকা নিয়েই টয়লেটে চলে গেলেন।
এটা বলা
বাহুল্য নয় যে, এই
কাজ তিনি প্রায়ই করে থাকেন। এটাও
বাজে অভ্যাসগুলোর একটি।
৪.
টয়লেট থেকে
পত্রিকা হাতেই বের হয়ে এলেন,এবং সোফায় বসে আবার পড়তে শুরু করলেন। এরমধ্যে পত্রিকার অনেক স্থান পানিতে ভিজে গেছে। আর ঐশীর সবচেয়ে ঘৃণার বিষয় হল এটি।
শিরোনাম দেখতে
দেখতে শেষের পাতায় জামাল সাহেবের চোখ আটকে গেল।
“কলাবাগানের কাছে বিমান
বিধ্বস্ত “
শিরোনামটি
পড়েই তিনি উঠে পায়চারি করতে লাগলেন। তিনিও
কলাবাগানে থাকেন এবং কাল অনেক রাত জেগেছেন।কিন্তু বিমান বিধ্বস্তের মত কোন শব্দ পান নি।
দেরি না করে
নাইট ড্রেস ছেড়ে morning walk -এর ড্রেস পড়ে বেরিয়ে পড়লেন। যদিও তার ডায়াবেটিস
কিন্তু আজ হাটতে ইচ্ছা করছে না। হাটাহাটি
নিয়ে ডাক্তারের না যতটা বাড়াবাড়ি তার চেয়ে তার মেয়ের বাড়াবাড়িটাই বেশি।
মাঝে মাঝে যখন
জামাল সাহেবের এমন মনে হয় তখন তিনি রিক্সা করে ঘুরে সময় পার করেন। সময় হলে রাস্তার পাশের নলকূপ থেকে
হাতে-মুখে পানি ছিটিয়ে ,বাসা থেকে একটু দূরে নেমে দৌড়ে হাঁপাতে-হাঁপাতে বাসায় ঢোকেন। এটা তার মেয়ে ও স্বাস্থ্যের সাথে ছলনা
বৈ কিছুই না।
আজও তিনি
রিক্সা নিয়ে সমস্ত কলাবাগান ঘুরবেন ।তবে
আজ উদ্দেশ্য দুটো , এক-
পত্রিকার খবরের সত্যতা যাচাই ।দুই- মেয়ে ও স্বাস্থ্যের সাথে ছলনা করা।
সমস্ত
কলাবাগান চষে বেড়িয়েও জামাল সাহেব বিমান বিধ্বস্তের কোন আলামত পেলেন না। মনে মনে পত্রিকার লোকদের গালাগাল করলেন।এবং সিধান্ত নিলেন বাসায় গিয়ে পত্রিকা
অফিসে ফোন করে ঝাড়ি দিবেন।
৫.
প্রতিদিনের মত
জামাল সাহেব পানি ছিটিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বাসায় ঢুকলেন। সোফায় বসে পত্রিকা অফিসে ফোন দেবার জন্য রিসিভার
তুলে পত্রিকা অফিসে ফোন দিবেন এমন সময় খবরটি আবার পড়তে শুরু করলেন -
“কলাবাগানের কাছে বিমান বিধ্বস্ত “
পত্রিকা
ডেস্ক: কলাবাগান
একাদশের কাছে বাংলাদেশ বিমান একাদশ ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত।................................................................................................................................................................................................................................
বিস্তারিত
পড়ার সময় জামাল সাহেবের হাত থেকে রিসিভারটি পড়ে গেল ।
পাদটীকা: আমরা
হুজুগে বাঙালি । কোন কিছু সম্পূর্ণ
না জেনেই ঝাঁপিয়ে পড়তে ওস্তাদ!
good work .........
উত্তরমুছুন